তসলিমা নাসরিন: পয়লা বৈশাখের আনন্দই তো পিঠেপুলিতে, মিষ্টান্নে, বাঙালির ঘরোয়া খাবারে, পান্তা-ইলিশে! শুনছি এবারের বৈশাখের উৎসবে বৈশাখের কোনও খাবারই খাওয়া বারণ। কোনও খাবার বা পানীয়ের দোকানই নাকি থাকবে না উৎসবে। উৎসবের সময়ও কমিয়ে ফেলতে হবে, দুপুর দুটোর মধ্যে সব গুটিয়ে ফেলতে হবে, কারণ মানুষ যেন বেলা থাকতেই ঘরে ফিরতে পারে, ঘরে ফিরে ইফতার খেতে পারে। বাংলাদেশে এখন বাংলা সংস্কৃতির চেয়েও মূল্যবান ধর্মীয় সংস্কৃতি। এই ব্যাপারটি হঠাৎ করে ঘটেনি, গত তিন দশকে ধীরে ধীরেই সবার চোখের সামনেই ঘটেছে। কিন্তু রোজা তো সবাই রাখে না। অমুসলমানরা রাখে না, মুসলমানদের মধ্যে যারা প্রগতিশীল, তারাও রাখে না, শিশুরা রাখে না, বয়স্করা রাখে না, ঋতুস্রাব হচ্ছে যে মেয়েদের, তারা রাখে না, অসুখ-বিসুখ আছে, দিনের বেলায় ওষুধ খেতে হয় যাদের, তারাও রাখে না। রাখে’র পাল্লা ভারি, কিন্তু রাখে না’র পাল্লা নেহাত কম ভারি নয়। তাহলে বৈশাখের উৎসব থেকে খাদ্য এবং পানীয়কে বিদেয় কেন দেওয়া হলো? কে খাবে, কে খাবে না, খেলে কখন খাবে, কী খাবে-এসব নিয়ে কর্তৃপক্ষের মাথা ঘামানোরই তো কোনও দরকার নেই। এই যে পয়লা বৈশাখের উৎসবে বাধানিষেধ আরোপ হলো, এ কাদের স্বার্থে? কাদের খুশি করার উদ্দেশে? বাংলাদেশ কি আদৌ কোনও গণতান্ত্রিক দেশ? গণতান্ত্রিক দেশ হলে গণতন্ত্রকে তো মূল্য দিতে হবে। রোজা রাখার দল ভারি হলেই কি সরকারকে রোজা রাখার দলের সঙ্গে থাকতে হবে? সরকার তো তাদেরও যারা রোজা রাখে না! সরকার তো সবার জন্য, সংখ্যাগুরু, সংখ্যালঘু, সবার স্বার্থই তো সরকারকে দেখতে হবে। কিন্তু মনে হচ্ছে সরকার শুধু সংখ্যাগুরু রোজাদার মুসলমানের সরকার, আর কারওর নয়। আর কারওর না হলে এ নিশ্চয়ই কোনও গণতন্ত্র নয়, ধর্মনিরপেক্ষতার দাবি করলেও এ কোনও ধর্মনিরপেক্ষতা নয়।
বাঙালি মুসলমান দিন দিন গৃহহীন আর শেকড়হীন হয়ে পড়ছে। বাঙালির যে হাজার বছরের ইতিহাস, একে তারা মানতে চায় না। তাদের হিন্দু বৌদ্ধ পূর্বপুরুষেরা যে ধর্মান্তরিত হয়ে মুসলমান হয়েছে, তা স্বীকার করতে লজ্জা বোধ করে। শেকড়কে অস্বীকার করলে বৃক্ষের কী পরিণতি, তা নিশ্চয়ই সবাই অনুমান করতে পারে। বাঙালি মুসলমান বাংলা নামকে হিন্দু নাম বলে নাক সিঁটকোয়। নিজেদের নাম রাখছে ভিন ভাষায়। বাঙালি সংস্কৃতির পোশাক বাদ দিয়ে মরুর দেশের পোশাক অত্যন্ত গর্বের সঙ্গে গায়ে চড়াচ্ছে। যে দেশের বা যে সংস্কৃতির মোহে বুঁদ হয়ে আছে, সেই দেশের সেই সংস্কৃতিতে কিন্তু এদের কোনও স্থান নেই, কোনও মূল্য নেই, এরা নিতান্তই মিসকিন বা ভিখিরি হিসেবে সে দেশে চিহ্নিত। এরা বাঙালিত্ব স্বেচ্ছায় হারাচ্ছে, আর যে ভিনদেশি সংস্কৃতিকে গ্রহণ করছে, সেটিকেও সম্পূর্ণ গ্রহণ করতে পারছে না। এরা না ঘরকা, না ঘাটকা, এরা উ™£ান্ত, এরা অনেকটা হারিয়ে যাওয়া প্রজন্ম।
সরকারের পক্ষ থেকে পুলিশ নির্দেশ দিয়েছে, ছোট শিশুদের বৈশাখী উৎসবে আনা যাবে না। মুখোশ পরা যাবে না (নিকাব পরা যাবে)। উচ্চ শব্দ তৈরি করে এমন বাদ্যযন্ত্র উৎসবে যাবে না। মঙ্গল শোভাযাত্রায় মাঝপথে যোগ দেওয়া যাবে না।
আশঙ্কা হচ্ছে, এভাবেই কঠোর নিয়মনীতির চাপে ফেলে প্রতি বছরই বৈশাখের উৎসবকে জাঁকজমকহীন এবং মøান করে ফেলা হবে। মৌলবাদীরা তো কবে থেকেই বলতে শুরু করেছে, পয়লা বৈশাখ হিন্দুদের উৎসব। নিজের শেকড়কে অস্বীকার করলে লোকে এই ভাষাতেই নিজের জন্মকে দোষ দেয়। নিজের ইতিহাস, নিজের ভাষা আর সংস্কৃতিকে ঘৃণা যারা করে, তারা আসলে নিজেকে ঘৃণা করে। নিজেকে ঘৃণা করা জাতি ক্রমশ একটি ঘৃণ্য জাতিতে পরিণত হয়।
২. বাংলাদেশের মুন্সীগঞ্জ সদরের বিনোদপুর রামকুমার উচ্চবিদ্যালয়ের বিজ্ঞানশিক্ষক হৃদয়চন্দ্র মন্ডলকে ধর্ম অবমাননার জন্য জেলে পাঠানো হয়েছিল। উনিশ দিন জেল খাটার পর তিনি জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। কী ছিল তাঁর অপরাধ? কিছুদিন আগে তিনি দশম শ্রেণির ছাত্রদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিয়েছিলেন। ওই প্রশ্নগুলো, ধারণা করা হচ্ছে, ছিল ষড়যন্ত্রের পরিকল্পিত প্রশ্ন। উত্তরগুলো তিনি দিয়েছিলেন একজন বিজ্ঞানমনস্ক শিক্ষক হিসেবে তাঁর বিজ্ঞানশিক্ষালব্ধ জ্ঞান থেকে। হৃদয় মন্ডল বাইশ বছর শিক্ষকতা করেছেন ওই স্কুলে। এত অভিজ্ঞ শিক্ষক বুঝতে পারেননি, তাঁকে বিপদে ফেলার জন্য ছাত্ররা ওই প্রশ্নগুলো করছে, তাঁর অনুমতি না নিয়ে গোপনে রেকর্ড করছে ছাত্র-শিক্ষকের কথোপকথন।
আমার মনে হয় বুঝতে পারলেও হৃদয় মন্ডল ওই উত্তরগুলো দিতেন, কারণ তিনি চান ছাত্ররা বিজ্ঞান সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করুক। যে জ্ঞান তিনি বিতরণ করেছিলেন সেদিন, তা কোনও জটিল জ্ঞান ছিল না, ছিল নিতান্তই সাধারণ জ্ঞান। ধর্মের সঙ্গে বিজ্ঞানের সম্পর্ক কী? শিক্ষকের উত্তর ছিল, কোনও সম্পর্ক নেই। ধর্ম বিশ্বাস-নির্ভর, বিজ্ঞান যুক্তি এবং প্রমাণ-নির্ভর। ছাত্ররা বললো, বিজ্ঞানের থিওরিগুলো নেওয়া হয়েছে ধর্ম থেকে। শিক্ষক অস্বীকার করলেন। ছাত্ররা বললো, মহানবী সাড়ে চার হাজার বছর আগে বিজ্ঞানের সকল থিওরি বলে গেছেন। শিক্ষক বললেন, মহানবীর জন্মই তো চৌদ্দশ বছর আগে। ছাত্রদের বক্তব্য কোরআনই বিজ্ঞানের উৎস, শিক্ষকের বক্তব্য, কোরআন যদি বিজ্ঞানের উৎস হয়, কোরআন পড়ে মানুষ বিজ্ঞানী হচ্ছে না কেন? বিজ্ঞানীদের মধ্যে অধিকাংশই জন্ম নিচ্ছেন খ্রিস্টান দেশগুলোতে, সে দেশগুলোর লোক এখন খুব কমই ধর্ম মানছে। ছাত্ররা বারবারই বলছে, ধর্মের প্রমাণ আছে। শিক্ষক বারবারই বলছেন ধর্মের প্রমাণ নেই। শিক্ষক বলেছেন, হিন্দু ধর্ম বলে হনুমানের কানের ভেতর সূর্য থাকে, এর কিন্তু কোনও প্রমাণ নেই। ঈশ্বর সব সমস্যার সমাধান দেবেন, পরকালে বিচার করবেন, এসব বিশ্বাসের বিষয়, কোন প্রমাণ নেই।
এই ছাত্ররাই নারায়ে তকবির আল্লাহু আকবর বলে পরে মিছিল বের করে। বহিরাগত লোকও ছিল মিছিলে। বিজ্ঞানের অন্য একজন শিক্ষকই হৃদয় মন্ডলের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছেন। স্কুলের ইলেকট্রিশিয়ান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার মামলা করেন! তিনি কি শুনেছেন শিক্ষক এবং ছাত্রদের মধ্যে কী আলোচনা হয়েছিল? না শোনেননি, কিন্তু তাঁর নাকি ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লেগেছে। ধর্ম অবমাননার মামলা সরকারি অনুমতি ছাড়া কোনও আদালতের গ্রহণ করার আইন নেই, কিন্তু শিক্ষক হৃদয় মন্ডলের বিরুদ্ধে করা মামলাটি আইনের বিরুদ্ধে গিয়ে সরকারি অনুমতি ছাড়া গ্রহণ করা হয়েছে, এবং তাঁকে জেলহাজতে রাখা হয়েছে। প্রশ্ন এবং উত্তরের কথোপকথনটি অথবা আলোচনাটি সামাজিক মাধ্যমে প্রচার হওয়ায় মানুষ জানতে পেরেছে বিজ্ঞানের শিক্ষক বিজ্ঞানের জ্ঞান ছড়িয়ে দিতে চেয়েছেন ছাত্রদের মধ্যে। তিনি ধর্ম অবমাননা করার উদ্দেশ্য নিয়ে একটি বাক্যও উচ্চারণ করেননি। তিনি যুক্তি-প্রমাণ এবং বিশ্বাসের পার্থক্য বুঝিয়েছেন অত্যন্ত ধৈর্যসহ। আমি যদি সেদিন শিক্ষকের জায়গায় হতাম, আমার ধৈর্যের বাঁধ ভাঙত ছাত্রদের মধ্য থেকে এমন যুক্তিবুদ্ধিহীন ভোঁতামস্তিস্কপ্রসূত বাক্য এবং একই বাক্যের পুনরাবৃত্তি শুনে। এমন শিক্ষক বাংলাদেশের ইস্কুলগুলোয় এখন বড় দুর্লভ। মুখস্থবিদ্যার দেশে ছাত্ররা যেমন মুখস্থবিদ্যা ভালো হলে ভালো ছাত্র বনে যায়, মুখস্থবিদ্যা ভালো হলে পরীক্ষায় ভালো পাস দিয়ে শিক্ষকের চাকরিও জুটিয়ে ফেলতে পারে যে কেউ। হৃদয় মন্ডল যেভাবে বুঝে পড়েছেন বিজ্ঞান, মস্তিষ্কে ধারণ করেছেন বিজ্ঞান, যেভাবে তিনি বিজ্ঞানমনস্ক হয়েছেন সেভাবে আজকাল ক’টা ইস্কুলের কজন বিজ্ঞানশিক্ষক বিজ্ঞানমনস্ক হয়েছেন? খুব বেশি হননি বলে তাঁদের অনেকেই বিজ্ঞান আর ধর্মে কোনও পার্থক্য দেখেন না। পার্থক্য তো হওয়ার কথাই, বিজ্ঞান বিবর্তনের কথা বলে, ধর্ম বলে সৃষ্টিতত্ত্বের কথা। বিজ্ঞান বলে গোটা বিশ্ব ব্রহ্মান্ডের বয়স ১৩৮০ কোটি বছর, পৃথিবীর বয়স ৪৫০ কোটি বছর। বিবর্তনের ফলে মানুষ এলো দুই লাখ বছর আগে। এসবের ভূরি ভূরি প্রমাণ আছে। যুক্তির বিজ্ঞানের সঙ্গে বিশ্বাসের সৃষ্টিতত্ত্বের কিছুই মিলবে না। কারণ সৃষ্টিতত্ত্ব বলছে, একজন সর্বশক্তিমান ছ’হাজার বছর আগে মাত্র ছ’দিনে আসমান এবং জমিন সৃষ্টি করেছেন, মাটি দিয়ে মানুষ সৃষ্টি করেছেন, প্রথমে মানুষকে স্বর্গে রেখেছিলেন, নিষিদ্ধ গন্ধম ফল খাওয়ার শাস্তিস্বরূপ তাদের পৃথিবীতে নিক্ষেপ করেছেন। ধর্মের এই তত্ত্বের কোনও প্রমাণ নেই, এগুলোকে ‘বিশ্বাস’ করতে হয়। কিন্তু বিজ্ঞানীরা ব্রহ্মান্ডের এবং পৃথিবীর এবং প্রাণীর জন্ম সম্পর্কে যা বলেছেন, তার প্রমাণ দেখাচ্ছেন প্রতিনিয়ত। তাঁরা কখনও কোনও বিষয়ে ভুল বললে, সেই ভুল, পরে আরও ভালো প্রমাণের সন্ধান পেয়ে সংশোধন করে দিচ্ছেন। কিন্তু প্রমাণ ছাড়া কাউকে বলছেন না চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করতে।
শিক্ষক হৃদয় মন্ডলের অসীম ধৈর্য এবং বিজ্ঞানের জ্ঞান দিয়ে অন্ধকারে পড়ে থাকা ছাত্রদের তাঁর যে আলোকিত করার চেষ্টা-সেটি তুলনাহীন। তাঁকে পুরস্কৃত করা উচিত। অথচ তিনি ভালো কাজের পুরস্কার পাওয়া তো দূরের কথা, জেলের অন্ধকারে বসে চোখের জল ফেলেছেন। তাঁর পুত্র ইস্কুলে না গিয়ে ঘরে বসে আছে ভয়ে। পুত্র ঘরের বাইরে বেরোলে হয়তো পিটিয়ে মেরে ফেলবে অসহিষ্ণু লোকেরা। ধর্মান্ধ সন্ত্রাসীরা হৃদয় মন্ডলের বাড়িতে ঢিল ছুড়েছে। নাগালে পেলে শিক্ষককে হয়তো মেরেই ফেলতো। এমন কতো বিজ্ঞানমনস্ক মেধাবী মানুষের প্রাণ ঝরে যাচ্ছে। ধর্ম শেখাটা সহজ, তাই ধর্মকে মেনে নিচ্ছে আর বিজ্ঞান শেখাটা যেহেতু সহজ নয়, একে বাতিল করছে লোকেরা। আজ ভয়ে তটস্থ হৃদয় মন্ডলের পরিবার। তাদের নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব সরকারের, হৃদয় মন্ডলকে নিরাপত্তা দেওয়া, তাঁকে সুশিক্ষক হিসেবে সম্মানিত করার দায়িত্ব সরকারের।
তিনি কি এখন ওই বিনোদপুর রামকুমার ইস্কুলেই ফের দশম শ্রেণির ওই শিক্ষক অবমাননাকারী ধর্মান্ধ ছাত্রদের বিজ্ঞান পড়াবেন? যদি পড়ান, আমার আশংকা, তিনি আবারও অপদস্থ হবেন, আবারও তাঁর পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগবে। এই সময় সবচেয়ে জরুরি হলো, শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলাটি সম্পূর্ণ বাতিল করে দেওয়া, বরং যারা শিক্ষক অবমাননা করেছে তাদের বিরুদ্ধে মামলা হওয়া, হৃদয় মন্ডলকে হেনস্তা করার পেছনে যারা ষড়যন্ত্র করেছিল, তাদের শাস্তি হওয়া। এই কাজগুলো না হলে বিজ্ঞানমনস্কদের শুধু অপমান আর অপদস্থ হওয়া নয়, তাদের খুন হয়েও যেতে হবে। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না অভিজিৎ রায়, অনন্ত বিজয় দাশ, ওয়াশিকুর রহমান, রাজীব হায়দার, নিলয় নীল-এঁরা সবাই বিজ্ঞানমনস্ক ছিলেন। এঁদের নৃশংসভাবে হত্যা করেছে ধর্মান্ধ জিহাদি গোষ্ঠী। বিজ্ঞানমনস্ক মানুষের উপস্থিতি অন্ধকারে পড়ে থাকা ধর্মান্ধ জিহাদিদের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি। কারণ বিজ্ঞানমনস্ক জ্ঞানীরাই মানুষকে আলোকিত করতে চায়, সমাজকে নষ্ট অন্ধকারের নাগপাশ থেকে মুক্ত করতে চায়। আর ধর্মান্ধরা নারীবিদ্বেষ আর কূপমন্ডূকতা দিয়ে কিশোর যুবকদের মগজ ধোলাই করছে। এরাই আজ নাকে দড়ি দিয়ে সমাজকে ঘোরাচ্ছে। এদের দাবিই সরকার মেটাচ্ছে। এদের খুশি করতেই মাদরাসার ডিগ্রিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমতুল্য করা হয়েছে। এরাই বলে বিজ্ঞানের থিওরি এসেছে ধর্ম থেকে। এই ভুল শুধরে দিলে কারাগারে যেতে হয়। ধর্ম অবমাননার মামলা হয় দেশে। কখনও কিন্তু বিজ্ঞান অবমাননার মামলা হয় না। ধর্মকে সুরক্ষা দেওয়া হয়েছে। বিজ্ঞানীদের, বিজ্ঞানশিক্ষকদের, বিজ্ঞানমনস্ক মানুষদের সুরক্ষা দেওয়ার কোনও ব্যবস্থা দেশে নেই।
আমার আশংকা হৃদয় মন্ডল এখন আর আগের মতো তাঁর ছাত্রদের বলতে পারবেন না যে ধর্ম প্রমাণের বিষয় নয় বিশ্বাসের বিষয়। হয়তো তাঁকে বাঁচার জন্য বলতে হবে, ধর্মই বিজ্ঞান, বিজ্ঞানই ধর্ম। তা না হলে প্রাণ নিয়ে বাংলাদেশে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। অন্ধকারে বাস করতে হলে আলোকে নিভিয়ে ফেলতে হয়। হৃদয় মন্ডলকে হয়তো তা-ই করতে হবে।
দুঃখ হয়, একাত্তর সালে অতুল সম্ভাবনা নিয়ে জন্ম হওয়া দেশটি কী করে এত দ্রুত অজ্ঞানতার অন্ধকারে তলিয়ে গেল। লক্ষ কোটি হৃদয় এখন অন্ধত্বের শেকলে বন্দি, এই হৃদয়ের মুক্তি চাই। যুক্তিবুদ্ধি এখন কারাগারে, যুক্তিবুদ্ধির মুক্তি চাই।
লেখক : নির্বাসিত লেখিকা। সূএ: বাংলাাদেেশ প্রতিদিন